অদ্ভুত প্রেমের কিম্ভুত গল্প
সায়ন ঘোষ
তমাল
ও(রোফে) ফেলুদাঃ
সবাই কেন গাইতে গেলে, প্রেমের গানই গায়
ঘুরে ফিরে ভালবাসার কথাটাই
আমি অন্য কিছু গাইব বলে তোমার কাছে এসে
সবাই কেবল সবাই হয়ে যায়
সবাই আগলে রাখে তাদের শরীরের ভিতরে
ভালবাসার সত্যি কথাটাই
আমি অন্য কিছু করব বলে তোমার কাছে এসে
আমি সবাই কেবল সবাই হয়ে যাই
তাই সবার মত লিখছি্, আরো একটা প্রেমের গান
সবার মতো তোমাকেই চাই।......
রেডিওতে ভেষে আসা
এই গানটা, ঝিরঝিরে বৃস্টি, ঠান্ডা হাওয়া আর
দেবনাথ কথিত নিন্মচাপ মাথায় দিয়ে সন্টুদার চায়ের দোকানে এসে দেখলাম অচিন্ত্য ওরফে
আমাদের ইঞ্জিনীয়ার বসে আছে একা। বেশ খানিকটা ভিজে গেছে আর মুখটা কেমন গোঁজ করে বসে
আছে, বেশ গাল ফোলা গোবিন্দের মায়ের মত। সন্টুদার চায়ের ঠেকটা আমাদের কাছে সেকেন্ড
মরূদ্যান বলা যেতে পারে। কুলি টাউন আজকাল মোটামুটি কলকাতার সাথে পাল্লা দেয় তবে
শেফিল্ড ছিল তো এককালে তাই এখনো দিনের বেলা মেশিনের শব্দে, লোহার গাড়ি,
ওয়ার্কারদের ক্যাই ম্যাই আর ধুলোতে ভর্তি থাকে, তবে আমাদের পাড়াটা বড় এবং তথাকথিত
ভদ্র লোকেরা বাস করে তাই আপাত শান্ত, এটা আমাদের ফার্স্ট মরুদ্যান। আর সন্ধ্যাবেলা
হলেই সব হাওয়া, তাই হালকা সন্ধ্যের কিছু রসিক দাদু ছাড়া সন্টুদা মাছি তাড়াত যদি
আমরা ৮-১০টা ডিউটি না দিতাম, তাতে ৯ রান করে আউট হয়ে যাওয়া সন্টুদার যায় আসে না,
কারন পাড়ার সবথেকে চালু চায়ের দোকানটা যতীন জ্যেঠুর মানে সন্টুদার বাবার, আর
সন্টুদার দাদুর তৈরী এই দোকানটা এমন জায়গায় যে লোকে চট করে আসে না, কোন এক
ঝামেলাতে কয়েকটা ল্যাম্পপোস্ট কেউ বা কারা খুলে নিয়ে গেছে ফলে চিরকালীন আধো-অন্ধকার
থাকে, ফলে আমাদের সিগারেট টানতে অসুবিধা হয় না, তাই এটা সেকেন্ড মরূদ্যান। সন্টুদা
কে দাদা বলেই ডাকি তবে সন্টুদার একটা আড়াই বছরের ছেলে আছে, আর তিন বছর আগে সন্টুদা
আমাদেরি বাড়ির কাজের মাসির মেয়ে কমলাদির সাথে পালিয়ে গেছিল। তিন বছরের পুরানো বিয়েতে
আড়াই বছরের ছেলে কিভাবে হয় সেটা আপনারা ভাবুন কিন্তু তার পরেই সন্টুদার দাদুর
দোকানের ঝাঁপ খোলে আর গত দু বছর ধরে এটাই আমাদের ঠেক। তা সন্টুদার কথা ছাড়ুন,
আমাদের কথায় আসি দু বছর হল আমাদের স্কুল শেষ হয়েছে অনেকের, অনেকে কলেজে পড়ি আর
অনেকে চাকরী করে, তারা অবশ্য আমাদের সিনিয়ার, কেউ কেউ আবার বাবার ব্যাবসা দেখে, এই
নিয়ে ১০-১২ জনের গ্রুপ। কাকতালীয় ভাবে সবাই একই স্কুলে পড়েছি, একই পাড়ায় থাকি।
অফিস, ব্যাবসা বা টিউশানির পর আমরা সকলে আড্ডা দিই। রেগুলার ৭-৮ জন হয়, শনি রবিবার
১২-১৫ জন। অচিন্ত্য অবশ্য রেগুলার নয়। আগে সিনিয়ারদের ঠেকটা ছিল ক্লাবের একটা ঘরে,
তবে ঠিক ১০ মাস ১০ দিন আগে মিডল লেভেল,
টোয়েন্টি নাইন খেলার অছিলায় ঘরটার টোট্যাল দখল নেবার পর ওদেরো ঠেক এটা, ফলে এটা
এখন কমন ঠেক হয়ে গেছে, ওরা অবশ্য সি.এম.পি ফলো করে না আর অবশ্যই ওরা রেগুলার নয়।
কিরে ইঞ্জিনীয়ার? কি হাল, এমন ল্যাদ খেয়ে বসে আছিস যে?
- তাতে তোর কোন বালটা
ছেঁড়া যাচ্ছে?
আহা খিস্তি করছিস কর,
কিন্তু এমন করে বসে আছিস কেন? পরীক্ষায় ফেল করেছিস নাকি?
- ধুর বাল, ইঞ্জিনীয়ারীং
এ কেউ ফেল করে না, বল সাপ্লি। তাছাড়া রেসাল্ট পাবলিশ হয় নি। WBUT রেসাল্টের টেনশান দেয় না তোদের মত।
বোকাচোদা, আমি কি করে
জানব, তা প্রবলেমটা কি বলবি তো, এমনি এমনি তো তুই এমন বসে থাকার মতো গান্ডু নোস।
- বাকি পাবলিকেরা কোথায়?
এই বৃস্টি কাম
নিন্মচাপের বাজারে কেউ প্রেমিকার সাথে ফোনে ব্যাস্ত, বাকিরা কেউ আসবে না, দল
পাকিয়ে রাম টানছে। আমিও আসতাম না, জেরস্ক করতে যাচ্ছিলাম, আর আমারো এমন সুহানা
ওয়েদারে ওদের রাম-আড্ডাতে যাওয়ার কথা আছে কিন্তু তোকে দেখে বসে গেলাম, আর আজ এই
বুধবারে তোমার মতো হাফ গেরস্ত পাবলিক চলে আসবে সেটা তো বাকি বিন্দাস বান্দারা জানে
না, জানলে হয়ত চলে আসত। ভ্যানতারা ছাড়, খোলসা কর।
- হাফ গেরস্ত, খোটা
দিচ্ছিস।
ওহ, এই কেস। তা মেয়েটা
কে?
- কে মেয়ে? কার কথা
বলছিস।
মারব এক লাথি, আর বাপ
হতে পারবি না। ইয়ার্কি হচ্ছে। এই বৃস্টিতে তুমি ডেভ ডি (DEV D) মার্কা মুখ করে বসে আছ, আর ন্যাকামো হচ্ছে, “কে মেয়ে”, ন্যাকাষষ্ঠী একেবারে।
- না, মানে রাগ করিস না।
তুই কি গান্ডু ভাবিস
আমাদের? গত দু-তিন মাস রোজ তুই ৭ টা থেকে ৭.১৫ এই দোকানে বসে একটা চা আর একটা
ফ্লেক খেয়ে বাড়ি গিয়ে কেলিয়ে পরবি, আর শনি রবিবার লক্ষীছানা হয়ে এসে আড্ডা দিবি,
আমরা সেটা জানব না? মেয়েটা কে? যাকে দেখার জন্য তোর এই ১৫ মিনিটের ব্রেক?
- আসলে
ওই...............
যাহ, আপনাদের তো বলাই
হয়নি আমার পরিচয়টা। আমি শ্রীমান তমাল সরকার, বি.কম (অনার্স) সেকেন্ড ইয়ার, সিটি
কলেজ, খাতায় কলমে এস.এফ.আই এ নাম থাকলেও জীবনে ওদের কোন কিছুতে মুখ দেখাই না। আর
দেখানোর সময়ো নেই। মর্নিং কলেজ, কলেজ থেকে ফিরে পার্টটাইমে বাবার ব্যাবসাটা
সামান্য দেখি হাতখরচ ওতেই উঠে আসে, মাসে
দুহাজার। সপ্তাহে তিনদিন দুটো টিউশান থাকে। না না পড়াই না, পড়তে যাই। অনেকে
অবশ্য বাচ্ছাদের পড়ায়, তবে আমি পড়াতে গেলে ওরা কি শেখার বদলে কি শিখবে তার ঠিক
নেই, কি দরকার রিস্ক নিয়ে। পার্ট ওয়ানটা সেকেন্ড ডিভিশানে উতরেছে। তবে যাইহোক কমন
মিনিমাম প্রোগাম অনুযায়ী সপ্তাহে মিনিমাম দু দিন + দুটো ছুটির দিন ঠেকের আড্ডাটা
মাস্ট। একটা স্টেডি গার্লফ্রেন্ড আছে, বাড়িতে জানেও। যখন বাবার ব্যাবসাই ভবিতব্য
তখন নিজের পড়াশুনা, কেরিয়ার নিয়ে অত না ভাবলেও চলে যায়। আমার গার্লফ্রেন্ড পড়ে
ক্লাস ইলেভেনে, নাম প্রিয়া, তাকে পটানোটাও একটা গল্প বটে তাবে এবারে থাক। এই
গল্পটা তো অচিন্ত্যর।
অচিন্ত্যের কেসটা জলবৎ
তরলং, কেসটা কিছুটা জানিও, সিম্পল কেস, আরো ততোধিক সিম্পল সলিউশান।
ল্যাদখোরটাকে দিয়ে
একবার প্রোপোস করিয়ে দিতে পারলেই সমস্যা মিটে যায়। মেয়েটার নাম জানি না, মুখ চিনি,
প্রিয়ার স্কুলেই পড়ে, ল্যাদখোরটা জানে না কি না জানি না মেয়েটা ঘোষপাড়ার দিকে
থাকে, ইংলিশ কোচিনে এদিক দিয়েই পড়তে যায় আর ফেরে, কদিন হলো প্রিয়াও একই কোচিনে
জয়েন করেছে, তাই ওরা অন্য রূট নিয়েছে, দিন তিনেক দেখতে না পেয়েই অচিন্ত্য এমন
কেলিয়ে গেছে। আরে বই মুখস্ত করে ডাক্তার ইঞ্জিনীয়ার হওয়া যায়, মেয়ে পটানোটা একটা
আর্ট, সবাই পারে না গুরু। যাইহোক আজকে ওদের একটু দেরী করে ক্লাস শুরু, প্রিয়াকে
বলে দিয়েছি মেয়েটাকে নিয়ে এই রাস্তায় আসতে, উফ বলেও বিপদ, একগাদা,কান্না, ঝগড়ার পর
অবশেষে রাজী হয়েছে, তবে একটা চাপ আছে। প্রিয়া বলল মেয়েটার পিছনে নাকি একটা
ছ্যারামকৃষ্ণের ছেলে পড়েছে, ঠিক হ্যায়, কোই বাত নেহী, আমিও তমাল সরকার। অলরেডি
এস.এম.এস করে দিয়েছি, রাজর্ষি, অর্নব আর মুন্সি ঠিক জায়গায় পজিশান নিয়ে নেবে, দরকার
পরলে ওরা একটা মেনি মুখো হুলোকে ঠিক সামলে নেবে, তবে শালা আমার তিনটে বিয়ারের পয়সা
গেল। ঠিক অচিন্ত্য বা গুরুর থেকে উসুল করে নেব।
এই গান্ডু
- কি?
এমন ল্যাদ খেলে চলবে,
তুই না বলিস পাস করার পড় মাঠে ঘাটে পরে থেকে কাজ করতে হবে।
- হবেই তো, তুই আর ফোরন
দিস না।
তিনদিন দেখা না পেয়েই
এই অবস্থা, জিও, তোরই হবে।
- তু..তুই কি করে জানলি?
তোতলাস না, আজকে
মেয়েটা এই রাস্তা দিয়েই আসবে। যা করার আজকেই করতে হবে, জাগো বাঙ্গালী জাগো।
- তুই কি করে জানলি, তুই
কি জ্যোতিষী?
ওরে গান্ডু, আমি
জ্যোতিষীর বাবা, এবার যা যা বলব সেটাই করবি।
- কি করতে হবে?
কান টা নিয়ে আয়
বোকাচোদা, বলছি।
দিঠিপিয়া ও সন্ধিক্ষণঃ
কোচিনের পর বেড়ুতে
যাচ্ছি,
- শোন না, আজ একটু
মল্লিক লেন দিয়ে যাবি? ওর সাথে দেখা করব, এক সপ্তাহ হয়ে গেল দেখা হয়নি।
কেন রে প্রি? এই তো
সেদিন দেখলাম তমালদা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
- সেটা কি আর দেখা হল,
ওই একবার চোখের দেখা আর হাল্কা হাই-হ্যালো তে কি আর মন ভোলে? অবশ্য তুই আর কি করে
বুঝবি? তুই যদি প্রেম করতিস তো বুঝতিস।
দেখ প্রি, আমার ওসব
ফালতু কাজে মন নেই। তাছাড়া ওই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় একটা ছেলে কেমন আমার দিকে
ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে।
- ওমা, তা তোর গালটা লাল
হয়ে গেল কেন? সে ঠিক আছে, ও থাকবে, বলে দেব, ওদের পাড়া তো, ও সামলে নেবে। তা তোর
বুঝি ছেলেটাকে ভাল লাগে?
না মানে,
- তাহলে গালটা লাল হয়ে
গেল কেন?
কি ভুলভাল বলছিস, গাল
লাল হবে কেন? আর গাল লাল হয়ে গেলেই বুঝি লোকে প্রেমে পড়ে?
- দেখ দিঠি, গাল লাল হলে লোকে
প্রেমে পড়ে কিনা জানি না, তবে প্রথমদিকে যখন ওর কথা উঠত আমার গালটা তোর মতই লাল
হয়ে যেত। জীবনে অনেক কিছুই তো প্রথম করেছিস বা প্রথম হয়েছে, প্রেমটাও না হয় প্রথম
করবি। আমি আমার কথাই বললাম।
পাকা দিদিমা আমার।
- এবার চল বেশীক্ষন আটকে
রাখব না, পাঁচ সাত মিনিট মাত্র, ব্যাস। প্লিজ চল লক্ষীটি।
আচ্ছা চল।
তমালদা তো আগেই বলেছে
আমার কথা। আমি দিঠিপিয়া মিত্র, এখানকার গার্লস হাইস্কুলে ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। আমার কথা
আমি নিজে আর কি বলব, আমি খুব সাধারন একটা মেয়ে। পড়াশুনা ওই আর কি, সায়েন্স নিয়ে
পড়তে পারতাম কিন্তু সায়েন্সে যা অবস্থা আমি তাই কমার্স নিয়েই পড়ি। আমার ব্যাঙ্ক
অফিসার বাবা ওথেলোর খুব ভক্ত ছিল কিন্তু কেন যে আমার নাম দিঠিপিয়া রাখল কে জানে?
তবে বন্ধুরা যখন ছোট করে আমায় দিঠি বলে ডাকে আমার শুনতে খুব ভাল লাগে।বাবা এখানেই
কাজ করে কিন্তু আজকাল যেন খুব ব্যাস্ত হয়ে গেছে, আগে অফিস থেকে ফিরে ছোটবেলায়
আমাকে কত আদর করত এখন বাড়িতেও অফিসের ফাইল খুলে বসে। আগে ভাবতাম বাবার মত ব্যাঙ্কে
চাকরি করব, কিন্তু বাবাকে দেখে আমার সেই ইচ্ছা উবে গেছে। আমি খুব স্মার্ট বা
মডার্ন নই, বরং একটু সেকেলে, তার মানে এই নয় যে আমি জিন্স বা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ি
না তবে সুযোগ পেলে শাড়ী পড়তে আমার খুব ভাল লাগে।
প্রেম জিনিসটা কি সেটা
আমি বুঝে উঠতে পারি নি, সবাই বলে যারা মানে প্রেম করেছে বা করছে তারাও নাকি বুঝে
উঠতে পারে নি। তবে এখনো তেমন ভাবে কাউকে ভাল লাগে না খালি একজন ছাড়া। আমি অবশ্য
এসব ব্যাপারে বন্ধুদের থেকে অনেক পিছিয়ে, এই যে প্রিয়া আজ দু বছর ধরে তমালদার সাথে
জমিয়ে প্রেম করছে, ওদের নাকি বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে, আবার তিথি, এখনই যে কতজনকে নাচাল
তার ঠিক নেই। দেখি মোবাইলে কথা বলেই যায়, যখনই জিজ্ঞাসা করি যে এত ব্যালেন্স ভরাস
কাকু রাগ করে না, বলে ধুস, ব্যালেন্স যারা কথা বলে তারাই ভরিয়ে দেয়, তার উপর তারাই
নাকি ফোন খরচা করে কথা বলে। আমি কিছুই করতে পারলাম না। তবে দিঠিপিয়ার বদলে যদি
আমার নাম যদি ডেসডিমোনা হত , তাহলে কিন্তু বেশ হত, আর ওকে মোটেই ওথেলোর মত দেখতে
নয়, তবে সপ্তপদীর মতো বাইকে অনন্তকাল চড়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই, তবে যখনই ওকে দেখি
আমার সেই অনিচ্ছেটা আর আমার বাঁধ মানে না।
ছেলেটাকে আমি চিনি,
অচিন্ত্যদা। আমার জেঠ্যুর ছেলের সাথে একসাথে পড়ত স্কুলে, তখন আমাদের বাড়িতে প্রায়ই
আসত, কিন্তু দাদা দূর্গাপুরে চলে যাবার পর আসে না। অচিন্ত্যদা রাজপুত্র নয় আবার
হ্যাক-ছিঃ ও নয়, কিন্তু তবুও অচিন্ত্যদাকে দেখলে আমার কেমন নার্ভাস লাগত, ওদের
সামনে যেতাম না। মাধ্যমিকের পর যখন একা একা কোচিন যাই তখন দেখি অচিন্ত্যদা কেমন
একদৃস্টে আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে, তখন খুব ভাল লাগে। একদিন দেখি অচিন্ত্যদা
দেবযানীদির সাথে কথা বলছে,আমাকে দেখেও দেখল না। সেদিন খুব কস্ট হয়েছিল, কয়েকদিন ওই
রাস্তা দিয়ে আর যাই নি, এমনকি একবার পেপার মার্টে দেখতে পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে
গেছিলাম কিন্তু ওই রাস্তাটা এতঘুর হত যে আবার পুরানো রাস্তায় ফিরতে হয়। কিন্তু
আবার কোচিনে যাবার সময় দেখি অচিন্ত্যদা আমার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখে
ওর বিষন্ন চোখ দুটো যেন খুশীতে ঝলকে উঠল,যেন ওর ব্যাকুল চোখ দুটো, ওর খুশীতে ডগমগ
মুখখানা কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। প্রিয়া আমার সাথে ভর্তি হবার পর মল্লিক
লেন দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হল। যদিও খুব ইচ্ছা করত ওই রাস্তা দিয়েই যাই কিন্তু
ইচ্ছাটা পূর্ন করার সাহষ হয়নি, তাই পিয়া যখন বলল আমার গালটা লাল হয়ে গেছে, আমি
এড়িয়ে গেলেও ওকে বলিনি যে এটা হয়েছে আবার অচিন্ত্যদাকে দেখতে পাব ভেবে।
অচিন্ত্যদাকে যখনি দেখি দোকানে বা সাইকেলে, বা রাস্তায় যাতায়াতের সময় তখন ছুঁতে
খুব ইচ্ছা করে কিন্তু ভয় পাই। অচিন্ত্যদার কথা ভাবলেই খুব ভাল লাগে, কেমন একটা
অদ্ভূত ভাললাগা ফিলিং। তিথি বলছিল এটা নাকি ক্রাশ। আমি মানতে পারিনি তবে জানিনা
ক্রাশ এইরকমই হয় কিনা, তবে যদি হয় সেটা খুব ভাল।
অচিন্ত্য – DEV D ?
শুয়োরের বাচ্ছার কথা
শুনেছেন? বলে আমি নাকি DEV D, তা তুই কি শালা প্রেমে
পড়িস নি না প্রেম করছিস না। সেই হ্যাবলকার্ত্তিক (ভাল নাম জানি না, এই নামেই ডাকি,
আর ও এই নামেই ফেমাস) যখন প্রিয়ার পিছনে লাগল তখন তো চৈতন্যর মতো ঠেকে বসে ‘হা
প্রিয়া, হা প্রিয়া” করে সিগারেটের গুষ্ঠি উদ্ধার করতিস, ভাগ্যিস গরমকাল ছিল নইলে
তো চায়ে মনেহয় ব্র্যান্ডি মিশিয়ে খেতিস, মালটাও ডাইরেক্ট টানতে পারিস না, রাম এর
আড্ডাতে রাম খেতে যাবি, ছোঃ। এখন বেশী বকবক করছিস বালটা। তা এই নামের কারন কি, আমি
নাকি কদিন দিঠির দেখা না পেয়ে হোস্টেলের মালের আসরে “আমি আর বাঁচতে চাইনা” জাতীয়
স্লোগাল দিয়েছি, তাই আমিই নাকি দেবদাসের মর্ডান রুপ DEV D। যত্তঃ ট্র্যাশ গল্প।
সরি, জেনে তো গেছেনই
আমার কথা, আমার নাম অচিন্ত্য বোস। পড়াশুনার কথা ছাড়ুন মোটামুটি ছিলাম, জয়েন্টে
ধেরিয়ে সোনারপুরের দিকের একটা প্রাইভেট কলেজে মেকানিক্যাল পড়ি। তাতে কিচ্ছুঃ যায়
আসে না কারন প্রতি বছর ভারতে আট লাখ ইঞ্জিনীয়ার তৈরী হয় আর তাদের নাকি ৯০% গান্ডু,
তাই কোন সন্দেহ নেই যে আমিও তাদের মতই এক গান্ডু, তবে মেকানিক্যালের বাজারটা অন্যদের
থেকে একটু ভাল এই যা।
যে মেয়েটাকে আমার ভাল
লাগে তার নাম তো জানেন, দিঠিপিয়া। বলিহারি বাবা, আর নাম ছিল না, যেন স্মরণজীৎ
চক্রবর্তী মেয়েটার নাম রেখেছে। দি-ঠি-পি-য়া এত্তবড় নামটা পছন্দ না হলেও দিঠি নামের
মানুষটাকে আমার খুব পছন্দ, সেই কবে থেকে। ওফ কি না করেছি। আমি যখন স্নেহাশিষ মানে
দিঠির জ্যাঠুর ছেলের সাথে স্কুলে পড়তাম তখন দিঠি মনেহয় নাইনে পড়ত। একঝলক ওর দেখা
পাবার জন্য আমি যে কতবার স্নেহাশিষদের বাড়ি গেছি তার ইয়ত্তা নেই। স্নেহাশিষের
সায়েন্স পড়া উচিত ছিল না, এখন ছিল না বললেই বা শুনছে কে, তা তাকে ম্যাথস বোঝানোর
চক্করে বহুবার ওদের বাড়ির চক্কর কেটেছি। তার দেখা কিন্তু পাওয়াই যেত না, যদিও বা
এক আধ ঝলক দেখা মিলত দুম করে সে হাপিস হয়ে যেত, ওফ সে কি যন্ত্রনা। তারপর এক
মাথামোটাকে আমায় ক্যালকুলাস বোঝাতে হত। যাইহোক মালটার জন্য আমার একটা উপকার
হয়েছিল, আমার অঙ্কের বেসটা একটু হলেও শক্তপোক্ত হয়ে গেছিল, তারপর ফার্স্ট ইয়ার
থেকেই ওকে ঝাড়ি মারার প্ল্যান করি কিন্তু সঙ্গে মা থাকলে কি আর ঝাড়ি আমারা যায়, ওর
মা আবার প্রায়ই আমার দিদির শ্বশুরবাড়িতে যায়। বলে দিলেই চিত্তির, দিদি টু বাবা
ভায়া মা, ফুল বাঁশ। যাইহোক মাধ্যমিকের পর ওকে একা কোচিনে যেত তখন দেখতাম এক ঝলক।
কিন্তু গত কদিন ধরে আর আসছে না, কি হয়েছে কে জানে? তার উপর আজকে এই বাতেলাবাজটার
হাতে ধরা পড়লাম, এমন কপাল।
কান আনার দরকার কি?
- আরে গুরু আছে
আসে-পাসেই, তা শোন না, ওই যে মেয়েটা
দিঠিপিয়া, কি হয়েছে?
- বাঃ, নামও জানিস, আমি
কিন্তু প্রিয়ার নাম জানতাম না। তা মেয়েটাকে তোর ভাল লাগে?
এমন বোকাচোদার মত কথা
বলছিস কেন?নিশ্চয় লাগে, নইলে দু-মাস ধরে এখানে বসে থাকব কেন?
- ধুস, আমিও কি সব বলছি,
বলছি মেয়েটার তোকে ভাল লাগে?
সেটা আমি কি করে জানব?
- কোন হিন্ট আছে, ধর এই
খান দিয়ে যাচ্ছে, তুই দেখছিস, তোকে পাস কাটিয়ে চলে গিয়ে খানিকদূর থেকে ঘার ঘূরিয়ে
একবার ফিক করে হাসল?
হ্যা, সে তো প্রায়ই
করে।
- আর কিছু, কোন ঘটনা।
না সেইরিকম কিছু না
তবে একবার দেবযানীর সাথে দেখা হয়েছিল, দেখি দিঠি যাচ্ছে, তা দেবযানীকে বুঝতে দেব
না বলে পাত্তা না দেবার ভান করলাম, দেখি কদিন আর এলই না, দোকানে একবার দেখা হয়েছিল
মুখ ঘুরিয়ে নিল। এই যেমন এখন আসছে না কদিন, এবারে কিন্তু সেরম কিছু হয় নি।
- ও চাপ নিস না, আসলে
প্রিয়া পঙ্কজদার কোচিনে ভর্তি হয়েছে তো ৩-৪ দিন হল তাই ওরা পাওয়ারহাউসের রাস্তাটা
নেয়।
ওহ, তাহলে আমি কি করব
এবার?
- ওঃ, তাহলে আর কি? কেস তো
মোটামুটি সেটল, এবারে সাহষ করে ১৪৩ বলে দে।
কিন্তু তাতে যদি হিতে
বিপরীত হয়?
- হয় তো হবে, কি আর হবে,
এমনিতেই এখনই বা কি ঢপের চপ হচ্ছে। তুই একটা রিক্স নে, নইলে দেখবি তুই ভয়ে বসে
রইলি, আর ছ্যারামকৃষ্ণের আতাটা ওকে তুলে নিয়ে গেল।
ছ্যারামকৃষ্ণের ছেলে
কোথা দিয়ে এলো?
- ওর মায়ের পেট থেকেই
এসছে, তবে এসছে। রাজর্ষি জানাল, আমাদের ভোম্বলচন্দ্র তোমার কম্পিটিটার হিষাবে দেখা
দিয়েছে।
ওই ক্যালানেকেস্ট
ভোম্বল।
- তোর হাবভাব দেখে মনে
হচ্ছে ক্যালানেকেস্টটা এখন তুই, সে যাই হোক ফিল্ডিং লাগানো আছে, ভোম্বলকে আজকে
অন্তত সাইজ করে দেওয়া হবে, প্রিয়া ওকে আমার সাথে দেখা করার অছিলায় ওকে নিয়ে আসবে, আমাকে
খালি তিনটে বিয়ারের পয়সা দিবি আর সোজা গিয়ে হিরোর মত বলবি।
কি বলব??
- তুমি আমায় রাখী
পড়াবে??
যাঃ, কি যাতা বলছিস
বোকাচোদা।
- তোর নড়বরে অবস্থা দেখে
যেটা মনে হল সেটাই বলছি, কি বলব?? বলবি “আমার তোমাকে ভাল লাগে, তোমার আমাকে ভাল
লাগে কিনা সেই উত্তরের অপেক্ষায় থাকব।”
থ্যাকন্স, তুই
সত্যিকারের বন্ধু, তবে আমি কি বলি, প্রথমে একটা চিঠি লিখে
- হা ভগবান, জেন ওয়াই এর
একি দশা! ধরা পড়ে গেলে বা কেস গড়বর হলে কিন্তু পুর আছোলা বাঁশ খাবি সেটা মাথায়
রাখিস। শুভর কেসটা মনে আছে তো?
তা বলে দুম করে..
- আমি কি বলি, বলিস না,
তবে কদিন বাদে যদি ওকে তোর সাইকেলের পাশে হাঁটার বদলে ভোম্বলের হাঙ্কের পিছনে
দেখিস, মাল খেয়ে বলিস না “আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করছে না”।
তুই যেটা বললি, সেটা
বলব?
- হ্যা রে পাগলা হ্যাঁ,
মনে রাখিস, হাই রিক্স হাই গেন, নো রিক্স, নো গেন। অবশ্য তোর যা কেস তাতে ক্যাপিটাল
আটকে রাখলে ডেপ্রিশিয়েসান হয়ে লস খাবি।
তুই কমার্সের ক্লাস
শুরু করলি নাকি? আমি প্রেমে পড়েছি, এটা প্রেম, প্রফিট এন্ড লস স্টেটমেন্ট নয়।
- হাঃ হাঃ, নতূন তো, মনে
হয়। কদিন বাদে দেখবি আসেট লাইবিলিটি হয়ে যাবে, নিজেই দেখিস। অবশ্য তোর যা হাল
ভেঞ্চারের আগেই তুই ব্যাঙ্কক্রাপ্ট হয়ে গেছিস।
ফালতু বকিস না।
- তাই তো বলছি, জাগো
বাঙালি জাগো। ওঃ কেঃ, যা বললাম মনে রাখিস।
ঝিরিঝিতে বৃস্টিটা
থেমে গেল, দূর থেকে দেখি ওরা আসছে, কথাটা শোনার পর থেকেই ভয়ে বুকটা কেনম ঢিপঢিপ
করছিল, সেটা কেমন বেড়ে গেল। গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে, ওরা ঠেকের উলটো দিকে
এসে দাঁড়াল, মায়াবী চোখ দুটো একঝলক দেখতে পেলাম কিন্তু সেটা ওই একলহমা, আবার ছাতার
আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা এগিয়ে গেলাম। তমাল আমাকে সুযোগ করে দিতে গিয়ে বলে উঠল
- ‘অচিন্ত্য, ও একলা
দাঁড়িয়ে থাকবে, তুই একটু দাড়ানা ওর সাথে, গল্প কর, আমরা ৫-১০ মিনিটে আসছি’।
একটা মিস্টি রিনরিনে
গলা বলে উঠল “ সুখ দুঃখের কথা তাড়াতাড়ি শেষ করো তমালদা, বৃস্টি পড়ছে, দেরী হলে মা
চিন্তা করবে আবার’।
কথাটা শুনেই তমাল একটা
হায়নার হাসি-কুমীরের কান্না টাইপ মিক্সচার এক্সপ্রেসন দিয়ে কেটে পড়ল, আমাকে একলা
ফেলে। দিঠি হাওয়ায় লেপ্টে থাকা চুলগুলো নিজের নাকের উপর থেকে বাঁ হাত দিয়ে সরাল,
আমি যেন মোনালিসাকে দেখতে পেলাম, আর মোনালিসা যেন দ্যা ভিঞ্চিকে দেখে লজ্জায় চোখটা
নামিয়ে ফেলল।
এসো না, ওই চাতালটায়
দাঁড়াই, যদি আবার বৃস্টি আসে।
- হ্যাঁ ঠিকই।
স্নেহাশিষ ভাল আছে?
- দাদা, ভালোই আছে।
কোন অসুবিধা হচ্ছে না
তো?
- কার দাদার?
না না, তোমার, এইখানে
দাঁড়াতে?
- না না, অসুবিধা কিসের?
একটা কথা বলার ছিল।
কথাটা বললাম বটে তবে
গলা তখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, একটু জল পেলে ভাল হত। আমি কাঁপতে কাঁপতে ওর হাত দুটো
ধরলাম। আশ্বস্ত হলাম ছাড়িয়ে নেবার চেস্টা করল না উলটে ও একটু কেঁপে দুটো মায়াবী
চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকাল। ওইভাবে দুজনে দুজনের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানি না।
তলানিতে পরে থাকা সাহষ সঞ্চয় করে বলতে যাব এমন সময়
“আবেঃ অচিন্ত্য, বামুন
হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে নেই”।
আমার কথা – ঢিচক্যাওঃ
বাকি গল্পটা এবার আমি
শেষ করব। আমি কে? ধূর বাল, আমি গল্পের নাটের-গুরু মাইরী।আমি দূর থেকে সব ঘটনা
দেখেছি, খালি কাছে যাই নি। তা আমার কথা বলি, আরে এতক্ষন ধরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে গল্পটা
পড়ছেন আমার কথা জানবেন না, তাই হয় নাকি। না না, শুনতেই হবে। আমি আকাশ রায়চৌধূরী,
সিভিল ইঞ্জিনীয়ার, একটা বালের কোম্পানীর প্রোজেক্ট ম্যানেজার, তাই প্রায়ই এখানে
ওখানে ঘুরতে হয়, আড্ডা তো দূরের কথা বাড়িতে আসার সময় পর্যন্ত পাই না, সেই নিয়ে
আমার বউ এর খুব দুঃখ, কিন্তু কি করি পাপী পেট কা সাওয়াল হ্যায়।এই অচিন্ত্য, তমাল,
রাজর্ষি, মুন্সি, অর্ণব সব আমারই চেলা। হ্যাঁ গুরু আমিই। আমি ওদের অনেকভাবে হেল্প
করেছি, প্রিয়া-তমালের কেসটা আমিই করিয়েছিলাম, হ্যাবলকার্তিককে সাইজের প্ল্যানটাও
আমার ছিল, এমনকি এই যে অচিন্ত্য, ওকে কোর ইঞ্জিনিয়ারীং পড়ানোর বুদ্ধিটাও আমার নইলে
ওর বাপ ওকে আই.টি কুলী বানাত। তমাল আমার সবচেয়ে গ্রেট শিষ্য, মানুষকে বলির পাঁঠা
বানাতে ওর তুলনা মেলে না, ক্লাবের দুর্গাপুজোর এক্টিভ মেম্বার, পটিয়ে চাঁদা তুলতে
ওর জুড়ি নেই, একেবারে ট্রু লিডার তবে একটু বাতেলাবাজ এই যা, আর টেনশানে একটু তুতলে
যায়। তা দোষেগুনেই তো মানুষ বলুন, যাইহোক গল্পে আসি।
অচিন্ত্য যে প্রেমে পড়েছে, সেটা
তমাল নয় ফার্স্ট নোটিশ করি আমি। হপ্তাখানেক আগে ভাগ্যক্রমে আড্ডায় আসি, আর জুনিয়ার
গ্যাং কে অচিন্ত্যর কথা জিজ্ঞাসা করলে চায়ের দোকানের সন্টুদাই প্রথম ডিফেকশানটা
ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আমি তমালকে দিয়ে এক সদস্যের কমিটি
তৈরী করে দিই। ও ব্যাটার ফেলুদা সাজার খুব ইচ্ছে ছোটবেলা থেকে, যাক চান্স নিক। আমি
তখন ভিলাই তে, তমাল যে খবর দেয় তাতে মোটামুটি শিওর হই যে অচিন্ত্য প্রেমে পড়েছে। যতই
হোক অচিন্ত্যর প্রতি আমার একটা এক্সট্রা দায়িত্ব তো থেকেই যায়, কেন? আসলে
অচিন্ত্যর দিদি অলোকনন্দা খুব ছোটবেলায় আমাকে রাখী পড়াত, ব্যাপারটা আমাকে এতটাই
কস্ট দিত যে আমি বড় হয়ে অলোকনন্দাকে সিঁদুর দিই, হ্যাঁ ওই দো চুটকি সিঁদুর আরকি,
তাই সেদিক দিয়ে আমার শালার প্রতি অল্প হলেও একটা এক্সট্রা দায়িত্ব তো আমার রয়েই
যায়। আমি তমালকে সামান্য কিছু হিন্ট দিই, বাকিটা আপনারা জানেন।
অচিন্ত্য আর দিঠি দুজনে যখন সামনা
সামনি দাঁড়িয়ে আছে আর চুপচাপ একদৃস্টে দুজনে দুজনে দেখছে (ওফ, ঠিক যেন ক্লাসিক
হিন্দী সিনেমা, এর পরে পরাগ সিন,বলে দিই এই পরাগ পান-পরাগ নয়) ঠিক সেই সময় গলি
দিয়ে বেরিয়ে এল গল্পের ভিলেন। হ্যাঁ কি আর বলব, রাজর্ষি, অর্ণব, মুন্সি ডাহা ফেল।
অন্ধকার ভেদ করে সামনে এসে দাঁড়াল রাইভাল পাড়ার, রাইভাল ক্লাবের ও রাইভাল স্কুলের
নবীন হিরো ভোম্বল ওরফে হিরন্ময়। এই হিরন্ময়ের দাদা মৃন্ময় সেন আমাকে সেম বাঁশ
দেবার আপ্রান চেস্টা করেছিল, কিন্তু আকাশ রায়চৌধুরীর কাছে ফেল মারে।ছোটকার মুখে
শুনেছি ওই হিরন্ময়ের মেজজ্যেঠুও নাকি আমার ছোটকাকে সেম বাঁশ দেবার চেস্টা করেন
কিন্তু তিনিও ফেল মারেন। এমনো শুনেছি যে আমার বাবার বিয়ের সময় মৃন্ময়ের দাদু নাকি
ওর বাবার জন্য আমার মাকেই পছন্দ করে রেষারেষিতে নেমে পরে, কিন্তু শেষ হাঁসি হাসেন আদিত্যবিক্রম
রায়চৌধূরী মানে আমার দাদু আর বিক্রম রায়চৌধূরী মানে আমার বাবা, রাত্তিরবেলা বটগাছে
চড়ে মায়ের জানলার পাশে তেরাত্তিরে বাবা কি করেছিলেন আমি অবশ্যই জানি না, আমাকে
কোনদিন বলেন নি। কিন্তু মা নাকি অলোকনন্দাকে বলেছে, আর আমাকে বলতে বারন করেছে। তাই
এই ব্যাপারটা দেখে আমার কাছে এটা পার্সোন্যাল থেকে ভেরী ভেরী পার্সোন্যাল হয়ে গেল।
হ্যাঁ যা বলছিলাম,
ভোম্বল দেখলাম অন্ধকার ফুঁড়ে দুটো বন্ধুর সাথে এসে দাড়িয়েছে। তমাল শুকনো মুখে
তুতলে যা বলল (নাহ, অন্যের তোতলা ডায়লগ আমি লিখব এমন পাষন্ড আমি নই)তার সারার্থ
হল, রাজর্ষি, অর্ণব আর মুন্সি ওদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারতে দেখে এতটাই বোর
হয়ে যায় যে সোনালী বারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাজর্ষি আর অর্ণব দুজনের কলেজে
এন.সি.সি করে আর মুন্সি ক্যারাটেতে পানু বেল্ট ইয়ে ব্লু বেল্ট, তাই ওদের দেখে
ভোম্বল এন্ড কোং নাকি আর এগোয়নি, আর ওরা সরতেই নাকি দিঠিদের পিছু নিয়েছে। তবে তমাল
নাকি রাজর্ষিদের ইনর্ফম করে দিয়েছে, ওরা সোনালী বারের বিয়ার ফেলে তমাল আর ভোম্বলকেকে
খিস্তি দিতে দিতে রিক্সায় উঠেছে। আমি জানি তাড়াতাড়ি এলেই মঙ্গল, নইলে এখানে যদি
একটা ক্যালাকেলি লেগে যায় তবে ঠান্ডাযুদ্ধ শেষ হয়ে বড়সর বাওয়াল হবে আর তাতে
অচিন্ত্যর প্রেম শুরু হবার আগেই সেটা কোমায় যাবে, এমনকি যেহেতু প্রিয়া ওই পাড়ারই
মেয়ে তমালের ফিক্সড বিয়েটা ভেঙ্গে যেতে বেশীক্ষন লাগবে না, কিন্তু অচিন্ত্যের
সদিকে হুশ থাকলে তো। আবার শুরু হয়ে যাওয়া ঝিরঝিরে বৃস্টিতে ওরা খালিকটা ভিজে গেছে
আর তাকিয়ে আছে দিঠির চোখের দিকে, যেন দিঠির চোখে বোকাচোদাটা নিজের সর্বনাশ দেখতে পেয়েছে।
স্ট্রীট লাইটগুলোর এমন অবস্থা আমার পজিসান থেকে জায়গাটার সাথে এক্সসরসিস্টের সেই
এন্ট্রি সিনটার হুবহু মিল লাগছে। অবশ্য ওকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমি জানি, হয় মৃন্ময়
নয় আমি এই এস্পার উস্পার করব বলে যখন চোখে চোখ রেখে অলোকনন্দাকে কাউন্টার করতে
গেছিলাম, প্রশ্ন তো করতেই পারিনি, উলটে মনে হয়েছিল চারিদিকে যেন মহাব্রম্ভাণ্ডের
মহানিঃস্তব্ধতা, চোখ দুটোতে দেখলে যেন মহাশশ্মানের মহাশান্তি, খালি ওই দুটো মায়াবি
চোখ আর কিছু না। আমি প্রশ্ন করতে পারিনি কিন্তু সে চোখের জলে উত্তর দিয়েছিল, আমি
উত্তর পেয়ে গিয়েছিলাম, খালি সেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। তাই আমি জানি।
ভোম্বল সোজা এগিয়ে এসে
অচিন্তকে ঘিরে ধরল। আমি আর চন্দন (আমার বন্ধু, আমার অফিসে আমার জুনিয়ার ও বটে) চা
ফেলে উঠে গেলাম, যতই হোক, পাড়ার ছেলে আর তায় আমার শালা ক্যাল খেতে যাচ্ছে আর সেটা
তো চুপচাপ দেখা যায় না, কিন্তু যেতে গিয়েও থামিয়ে দিলাম , দেখি কি করে অচিন্ত্য,
নইলে আমরা তো আছিই।
- আবেঃ অচিন্ত্য, বামুন
হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে নেই।
কেন বে? তোর কি? এখানে
দাঁড়িয়ে বেশী পায়তাড়া মেরো না। মানে মানে কাট তো এখান থেকে।
- দ্যাখ তুই দিঠির পিছনে
লেগে ওকে বিরিক্ত করবি ত মার খাবি, পাড়া বুঝি না।
কেন রে বাল ভোম্বল,
দিঠি তোর বোন নাকি?
- না, আমার পারার মেয়েকে
তুই ডিস্টার্ব করবি, আমরা ছেড়ে দেব নাকি?তোর বাড়িতে জানাচ্ছি
প্রমান কর আমি
ডিস্টার্ব করছি, আর তুই আমার বাড়িতে বা দিঠির বাড়িতে কিছু জানালে আমি বলব তুই
দিঠিকে বিরিক্ত করছিস। তমাল, প্রিয়া সাক্ষী দেবে। এমনিতেই তোর পাস্ট ট্র্যাক
রেকর্ড ভাল নয়। অনূসুয়াকে আই লাভ ইউ বলতে গিয়ে সেম কেসে মঠ বাগানের ছেলেদের হাতে
মার খেয়েছিলিস ভুলে গেলি? পাপিয়ার পিছনে ঘুরতিস, ওর দাদার ক্যালানি আর তারপর তোর
বাবার ক্যালানিটা মনে হয় ভুলে গেছিস। ঠিক আছে, তুই যদি বেশী ব্যাক ব্যাক করিস আবার
মনে পড়িয়ে দেবার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ভোম্বল, যাঃ কেটে পর।
- বারবার বলেছি আমাকে
ভোম্বল বলবি না।
হাজার বার বলব, বোকাচোদা
ভোম্বল, ক্যালানেকেস্ট ভোম্বল, কি করবি তুই?
না কিছু, করতে হয়নি,
ভোম্বল মারল এক ধাক্কা, অচিন্ত্য ধাক্কাটা সামলে নিতে পারল না কিন্তু কষাল এক ঝেড়ে
মাথি। দুজনেই পরে গেল। ভোম্বল মাটি থেকে ওঠার আগেই দেখল একটা রিক্সা থেকে রাজর্ষি,
অর্ণব আর মুন্সি নামছে, তমাল, আমি আর চন্দন তিনজনে দাঁড়িয়ে আছি। মনে হয় স্মার্ট
ছেলে, মানে মানে কেটে পড়ল। সবাই এগিয়ে যাবার আগেই থেমে গেল। একটা ছায়া শরীর ঝুঁকে
অচিন্ত্যের পাশে বসে পড়েছে, অচিন্ত্যর হাতটা এখন ওর হাতে। একটা মিস্টি শব্দ বলে
উঠল।
- ইস, এইভাবে কেউ মারপিট
করে। এতো কেটে গেছে।
কেটে গেছে তো গেছে,
ওদের ছাড়ব না।
- আর বাহাদূরী দেখাতে
হবে না।
কিন্তু ওরা, দিঠি তোমাকে....
- কোন কিন্তু নয়
দিঠি, আই লাভ ইউ।
- আমি জানি
আমার উত্তর?
দিঠি ফিক করে হেসে
ফেলল, বলল “জানি না যাও”। একটা চিরকূট গুঁজে দিল, তারপর ছাতাটা খুলে এগিয়ে গেল।
চিরকূটে দিঠির মাধ্যমিকে ভাল রেসাল্ট উপলক্ষে কেনা মোবাইলের নাম্বারটা ছিল। ব্যাস
আর কি, প্রেম কাহিনী শুরু, অবশ্য শুরু হল না শুরু করানো হল সেটা আপনারাই বলতে
পারবেন ভাল। এরপর কি হয়েছে জানি না। অলোকনন্দাকে বলতে হবে, মানাতে হবে, এমনিতেও ঠেকে
লেট হয়ে গেছে, কাল এলাহবাদ যাওয়ার ট্রেন আছে সকালে, অনেক কাজ। তমালরা আছে তো, জেনে
নেবে খন। চলি, বিয়ে করার অনেক জ্বালা মশাই।
(গল্পটা একটা
ক্রুসিয়াল পয়েন্টে আটকে গেছিল, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তার খোরাক যোগানোর জন্য
প্রিয় দাদা বাসু আচার্য্য ও ফেসবুকের স্বল্পপরিচিতা বান্ধবী অভিষিক্তা রায়কে আমার
অশেষ ধন্যবাদ)