বাঙ্গালী জাতি – একটি দ্বন্দমূলক সমালোচনা
(শিরোনাম পড়ে প্লিজ ঘাবড়াবেন না)
লেখক – নিও বেঙ্গলী ডারউইন (ইয়ে, সায়ন ঘোষ)
সেদিন কোন এক আড্ডাতে আলোচনা হচ্ছিল “বাঙ্গালীদের কেন অন্য প্রদেশবাসীরা এত হীন নজরে দেখেন?”, স্বভাবতই আলোচনা ৩৪ বছরের অপশাষন, কর্মহীনতা/কর্মবিমুখতা বনাম নতূন সরকারের কার্জকারিতা ও দূরদর্শীতায় পরিণত হবার আগেই আঁতেল বাঙ্গালীর প্রতিনিধি হিষাবে আমি যে থিসিস নামাই সেটাই লিখে ফেলতে বড় ইচ্ছা করল।
বাঙ্গালী বলতে যেটা বোঝায় সেটা যদি শুধু মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীতে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে তার ২ টো টাইপ, যদিও আরো একটা আছে। মোট ৩ টে বলা যায়
পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীঃ
সুপ্ত আঁতেল, স্বপ্নবিলাসী, ভাববাদী, হচ্ছে-হবে ও স্বভাব বিপ্লবী, সুখী, অলস ও পেটুক মানিষিকতার। এরা গতকালের গৌরব নিয়ে গর্ব করে ও ভবিষৎ এর কথা মোটেও চিন্তা করে না, এবং সবাই কালচার কাকু হয়ে থাকেন। অসম্ভব বুকুনি ঝারতে পারে ও সেই নিয়ে কফি হাউসে-অলি পাবে (অধুনা বং প্রযাতিভুক্তদের জন্য সিসিডি ও বারিস্তা) কফি-হুইস্কি সহযোগে তুফান তুলে থিসিস নামাতে পারে কিন্তু কিন্তু করলে সেটা হবে হবে সেটা কেউ করে না। স্বভাবে অসম্ভব আবেগপ্রবন ও আনন্দ গোষ্ঠীর দ্বারা বিশাল প্রভাবিত। গ্লোবাল বাঙ্গালী হবার প্রচেস্টায় রাবীন্দ্রিকতা বজায় রাখতে গিয়ে "বং" হয়েছে, এখনো ঘটি-বাঙ্গাল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ও ইলিশ-চিংড়ি/আলুপোস্ত নিয়ে এদের সীমাহীন বিতর্কের শেষ নেই, তবে গড়ের মাঠে গোড়া ঠ্যাঙ্গানো বা ময়দান কাঁপানো মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলে যে বাঙ্গালী ফুটবলারের সংখ্যা যে দিন দিন কমছে তাতে এদের কিছু যায় আসে না। খুবই হুজুগে জাতি নইলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায়/বন্ধুতে-বন্ধুতে হাতাহাতি লাগাতে আর কেউ পারবে না। এক কালে কেরানীর চাকরি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী, প্রাচ্যের লন্ডন কলকাতা (কোন এক কালে ছিল, বাংলার নতূন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিশ্রুত অধুনা কলকাতা নয়) ও আই.সি.এসের দৌলতে সারা ভারতে শাষকের হাতা হিষাবে কাজ করার ফলে উন্নাষিকতা ও প্রাদেশিকতার পরিপূর্ন কিন্তু জাতাভ্যিমানী নয় বরং বেশ পলায়নপর মানষিকতায় আচ্ছন্ন। এরা সকলেই আন্ত্রিক চেটা করেন বিবেকানন্দকে ফলো করে পরিব্রাজক হিষাবে বছরে অন্তত দুবার ঘুরে বেড়াতে তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখেন যেন সস্তা হয় ও বাঙ্গালী খানা পাওয়া যায়। বেসিক্যালি মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর মেধা অন্য মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের থেকে খুব সামান্য হলে অল্প বেশী। সবথেকে অদ্ভূত ব্যাপার সকলেই মনে করে যে যারা বাইরে থাকেন তাদের এই রাজ্যের জন্য কিছু করা উচিত কিন্তু এই রাজ্যের থেকে কেউ কিছু করতে গেলে তাকে কাঁকড়ার মত পিছন টেনে ধরে থাকে। কিন্তু বাঙ্গালীর উন্নতি ঘটেছে, এখন বাঙ্গালী পয়লা জানুয়ারীতেও মদ্যপান করে আবার পয়লা বৈশাখেও মদ্যপান করে। ফলত হঠাৎ এদের কেউ বাইরে গেলে যে অন্যদের বিদ্রুপের বলি হবে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বাঙ্গালীঃ
এরা বেশ কর্মঠ, ডারউইন বাবুকে বাধ্য হয়ে মেনে নিয়ে কর্মঠ হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন (অন্তত দু/তিন পুরুষ) না থাকার ফলে এদের মধ্যে বঙ্গের বাঙ্গালী সুলভ দোষ আর নেই বলএই চলে। তবে এরা সকলেও মনে করেন যে রবীন্দ্রনাথ চর্চা আবশ্যিক এবং সেটা না করতে পারলে এরা বাঙ্গালী হিষাবে মর্যাদা পাবেন না। এরা বাংলা ভাষা বলার ও টিকিয়ে রাখার অশেষ চেস্টা করেন কিন্তু পেরে ওঠেন না। তবে হ্যা এদের মনে যে সুপ্ত ইচ্ছাই থাকুক না কেন এরা সকলেই আপ্রাণ চেস্টা করেন এটা দেখাতে যে তাদের পশ্চিমবঙ্গীয় জাতভাইদের থেকে এরা কতটা আলাদা। তাই বাইরে থেকেও এদের কেউ কেউ বিদ্রুপের বলি হয়ে যান।
(যদি এই অংশটুকুর সাথে সেদিনের আলোচনার কোন সম্পর্ক ছিল না, তবে এটা যদি নাই বলতাম তাহলে আমি আঁতেল প্রমান কিভাবে হত।)
বিদেশের বাঙ্গালীঃ
এই বাঙ্গালীরা আবার প্রধানত তিন ধরনের হন।
১. বিদেশে জন্মানো বাঙ্গালীঃ
এনারা বেশ কনফিউস থাকতেন আগে। নিজের নাম, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, খাবার-দাবার বিদেশী গার্লফ্রেন্ড প্রায় সবকিছু নিয়েই। তবে সাম্রাজ্যবাদীদের দেশে বলিউডি সিনেমা, যশ চোপড়া ও চিকেন বাটার মশালার অনুপ্রবেশে এরা আজকাল খুব ভালই আছেন, কনফিউস কম হচ্ছেন। তবে সদ্য আগত দেশীয়দের সঙ্গে এরা মেশেন না ও ও এই পর্যায়ভুক্ত সফল বাঙ্গালীরা দেশে তাদের ও তাদের সাফল্য কে নিয়ে যে মাতামাতি হয় তাতে হাসাহাসি করে থাকেন।
২. বিদেশে দীর্ঘদিন থাকা বাঙ্গালীঃ
এরা বেশ অদ্ভূত, যেহেতু এরা বেশীরভাগই পশ্চিমবং থেকে এসেছেন তাই সেখানকার জল-আবহাওয়া-দূষণ-রাজনীতি ছেড়ে এলেও এরা বাঙ্গালীর স্বভাবগুলো ত্যাগ করে আসতে পারেন নি। এরা আজো আড্ডার উদ্দেশ্যে কয়েকশ কিলোমিটার গাড়ি চালান, মার্কেটে বিভিন্ন বাঙ্গালী মাছের খোজ করেন ও না পেয়ে তার সেইদেশীয় সাবস্টিটিউট খুজে আনেন, বাংলাদেশী ট্যাক্সিচালক দেখলে জমিয়ে ঘটি-বাঙ্গালের গল্প করেন ও উচ্চ-শিক্ষিত বাংলাদেশী দেখলে নাক সিটকোন। এরা বৎসরান্তে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গান-নাচের দল নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব করে প্রমাণ করতে চান তারা আজো মনে প্রানে কত বড় বাঙ্গালী রয়ে গেছেন ও দেখিয়ে দিতে চান মারোয়ারী বা গুজ্জুভাইদের থেকে তারা পয়সায় পিছিয়ে থাকতে পারেন কিন্তু তারাই ফ্রেঞ্চদের পরে সবচেয়ে বড় কালচার কাকু।তবে সবাই মুখে বলেন সেই অভাগা পোড়া দেশে তারা আর থাকতে চান না, দেশে ফেরার জন্য তাদের মন পড়ে আছে, কিন্তু মুশকিল হল দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে হাতে গোনা কয়েকজন ফিরে আশাহত হলেও অধিকাংশ (মূলত ৯৯.৯%) এরা কেউ ফেরার নামগন্ধ করেন না উলটে দেশে এসে ডলার-পাউন্ড ভাঙ্গিয়ে এনারা ধনবান সেটার পরিচয় রেখে যান।
৩. সদ্য যাওয়া বাঙ্গালীঃ
এরা মূলত ছাত্র ও আপার ডিভিশান আই.টি কুলি। অল্প কিছু ডাক্তারো আছেন। বাঙ্গালী ছাত্ররা অধিকাংশই মূলত গবেষনা করতে যান তাও স্কলারশিপ পেয়ে, ধনীর দুলাল বা দুলালীর সংখ্যা বেশ নগন্য বলা চলে। সেই দেশে গিয়ে এদের সকলের মাথা বেশ ঘুরে যায় কিন্তু পরে সেই দেশের নিরানন্দ তারা বুঝতে পারলেও সকলের একটাই লক্ষ্য থাকে তারা যেন সেখানেই চাকরি পেয়ে যান। যে কজন ফিরে আসতে বাধ্য হন তাদের অধিকাংশই দেশে ফিতে হা-হুতাশ করেন নইলে ছদ্ম-দেশপ্রেমিকতার আশ্রয় নেন। ইউ.ডি আই.টি কুলিরা চেস্টায় থাকেন তাদের কন্ট্রাক শেষে সেই কন্ট্রাক্ট রিনিও করতে নয়ত বিদেশী কোম্পানীতে চাকরী নিয়ে সেখানেই থেকে যেতে। তবে তাদের যে কজন ফিরে আসতে বাধ্য হন তারা দেশে ফিতে সেই দেশে কত সুখী ছিলেন সেই নিয়ে হা-হুতাশ করেন নয়ত সেই দেশ থাকার অযোগ্য এই নিন্দার আশ্রয়ে বিভিন্ন খুত ধ্রতে উদ্যোগী হন। দুই পক্ষই চেস্টায় থাকেন কিভাবে আবার বিদেশে যাওয়া যাবে সেই সুযোগ খোজার অপেক্ষায়। ডাক্তাররা থাকার সুযোগ খোজেন কম, কারন দেশে বিদেশী ডিগ্রী জুরলে জবাই করার লোক যেমন বেশী পাওয়া যাবে তেমনি কেউ পটল তুললে আইনি ঝামেলা বিশেষ হয় না।
উপসংহারে কি লিখব সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলুম না। তাই অগত্যা চন্দ্রবিন্দুর স্মরনাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। শেষ করলুম একটি বিখ্যাত গালের লাইন লিখে
‘জয় জয় জয় বঙ্গা, ন্যাকাই ঢঙা, হাত্তে হ্যারিকেন।’
সবিনয় নিবেদনঃ এটা পড়ে কিছু ভুল মনে হলে শুধরে দেবেন বা আরো মনে হলে যোগ করবেন দয়া করে।